আপনার পরিকল্পনা কেন ব্যর্থ হয়?

লেখক: শ্রী মণি গোপাল দাস 

এজগতে সকলেই তাদের ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করে থাকে। যদিও সবাই পরিকল্পনা করছে, কিন্তু তাদের সেসব পরিকল্পনা সবসময় বাস্তবায়িত হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিকল্পনাকারীকে তার ভেস্তে যাওয়া পূর্ব পরিকল্পনার শোকে মুহ্যমান হতে দেখা যায়। কিন্তু এর পেছনে আদৌ কোনো কারণ বা তত্ত্ব লুকিয়ে রয়েছে কি না অথবা ইতিবাচক কোনো বিষয় আছে কি না, তা নিয়ে সাধারণত কেউ চিন্তা করেন না। অথচ সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা প্রত্যেক পরিকল্পনাকারীর একটি অত্যাবশকীয় কার্য। তাই এ নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, কেন আমাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করার জন্য একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো।

   কোনো এক চিত্রশিল্পী বিশেষ একটি চিত্র অংকনের জন্য কয়েক দিন যাবৎ একটি নিভৃত স্থান খুঁজছিলেন, যেখানে গেলে তিনি তার মনের ভাব পূর্ণরূপে সেই চিত্রে ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হবেন। ভগবানের অশেষ কৃপায় পেয়েও গেলেন তার মনের মতো সুন্দর চিত্র অংকনের উপযোগী ক্ষেত্র। একটি সুউচ্চ পাহাড়, যার পাদদেশে বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসের চারণভূমি এবং লোকালয় শূন্য। চিত্রশিল্পী অত্যন্ত সন্তুষ্টচিত্তে তার চিত্রাংকনের সমস্ত উপকরণ নিয়ে সেই পাহাড়ের চূড়ায় উপনীত হলেন। তারপর মনের মাধুরী দিয়ে তার পূর্ব পরিকল্পিত চিত্র অংকনে রত হলেন। লোকালয় শূন্য ও মৃদুমন্দ বাতাসের দরুণ তার হৃদয়ে অনুভূত হয় এক নতুন শৈল্পিক আনন্দ, যার ফলে তার চিত্রিত ছবিটি তিনি বারবার অবলোকন করছিলেন। সাধারণত চিত্রিত ছবি দূর থেকেই বেশি সুন্দর দেখায়। তাই শিল্পী চিত্রের ত্রুটি বা সৌন্দর্য দর্শনের জন্য বারবার পিছনের দিকে সরে যাচ্ছিলেন। যতই দূরে সরে যাচ্ছিলেন, ততই যেন চিত্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এভাবে, শিল্পী তন্ময় হয়ে হয়ে ছবির সৌন্দর্য দেখছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে একটি ঢিল এসে তার দীর্ঘ পরিকল্পিত চিত্রিত ছবিটি নষ্ট করে দেয়। তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে ঢিলের উৎস খুঁজতে লাগলেন। তখন একটি ছোট্ট রাখাল বালক তার সামনে উপস্থিত হলো। শিল্পীর আর বুঝতে কষ্ট হলো না যে, এই দুষ্ট বালকই এ দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তখন তিনি অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে সেই বালককে অনেক ভর্ৎসনা করলেন এবং মারতে উদ্যত হলেন। সেসময় বালকটি বিনয়ের সাথে বলল, “দেখুন আমি যা করেছি, আপনার কল্যাণের জন্যই করেছি।” একথা শুনে শিল্পী আরো রেগে গেলেন এবং পুনরায় মারতে উদ্যত হলেন। তখন বালকটি অত্যন্ত ব্যথাতুর হৃদয়ে বলল, “আপনাকে আমি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অনেক ডেকেছি, কিন্তু আপনি শুনতে পাননি। তারপর আমি বাধ্য হয়েছি এ কাজ করতে। আপনি পিছনের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন- কেন আমি এরূপ কার্য করেছি।” তখন তিনি দেখলেন, তার পিছনেই ছিল এক সুগভীর খাদ। বালকটি যদি সেই মুহূর্তে ঢিল না ছুড়ত এবং শিল্পী যদি আর একটু পিছপা হতেন, তবে তার জীবনটাই হারাতে হতো।

  যদিও অনেক সময় পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় না, তবুও আমাদের কখনো হতাশ হওয়া উচিত নয়। কারণ, পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়াটাও হতে পারে আমাদের জন্য ভগবদ্প্রদত্ত বিশেষ কৃপা, যা আমরা আলোচ্য দৃষ্টান্তটিতে লক্ষ্য করলাম। ভগবান আমাদের কোনো সামান্যতম ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে বড় কোনো হিত সাধন করে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে হয়ত আমরা পরোক্ষ পরিকল্পনা ভঙ্গকারিকে দোষারোপ করে থাকি। কিন্তু ভক্ত সবকিছুকেই ভগবানের কৃপা বলে মনে করেন। তিনি ভগবানের ইচ্ছা ও নিজের ইচ্ছার মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন না। তিনি জানেন সৃজন, সংহার সবকিছুই ভগবানের দিব্য তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। তাই প্রত্যেকের এমন চিন্তা করা উচিত যে, পরম মঙ্গলময় ভগবান যা কিছুই করেন না কেন, সবই আমাদের হিতসাধনার্থেই করেন। -হরেকৃষ্ণ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *